শেষ নিঃশ্বাসেও হাতকড়া: সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যুশয্যায় নির্মম অমানবিকতা

আইন-শৃঙ্খলার নামে যদি শেষ মুহূর্তেও একজন মানুষকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়, তবে মানবাধিকারের চর্চা কেবল বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

Oct 1, 2025 - 01:40
 0
শেষ নিঃশ্বাসেও হাতকড়া: সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যুশয্যায় নির্মম অমানবিকতা
সংগৃহীত

আন্তঃবাণী প্রতিনিধি

ঢাকা: সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন। শ্বাসকষ্টে কাতর, প্রায় অচেতন এই বৃদ্ধ মানুষটির হাতে তখনো শক্ত করে বাঁধা ছিল লোহার হাতকড়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিটি শুধু তার পরিবারকেই নয়, পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মানবাধিকারের সীমা অতিক্রম করে রাষ্ট্রীয় নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নবিদ্ধ এই দৃশ্য যেন এক নির্মম অমানবিকতার প্রতিচ্ছবি।

৭৫ বছর বয়সী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘অপরাধী’র আসনে। জীবনের শেষ মুহূর্তেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি শিকল থেকে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মৃত্যুপথযাত্রী কিংবা অসুস্থ বন্দিকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা শুধু আইনের অপব্যবহারই নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি নগ্ন উপহাস। নূর খান লিটন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের হাতে হাতকড়া—এ দৃশ্য মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। প্রায় ৮০ বছরের এক অসুস্থ মানুষকে নিরাপত্তার অজুহাতে বেঁধে রাখা সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তোলা হয় সেই আলোচিত ছবিটি। পরদিন তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হলেও অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকায় শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানেন সাবেক এই মন্ত্রী।

অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ছবিটি পুরোনো। কারা অধিদপ্তরের এআইজি (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, “নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন এবং সেখানে হ্যান্ডকাফ থাকার সুযোগই ছিল না। বিভ্রান্তি ছড়াতে পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে।” তবে হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, ছবিটি আসলেই ২৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকেই তোলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের পেছনে ৩২ নম্বর বেডে কালো টি-শার্ট পরা এক রোগীকে। তার নাম মিজান। তিনি দীর্ঘদিন এই হাসপাতালের একই বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মিজানের স্বজনরা জানিয়েছেন, রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তাদের সামনের বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। পরদিন তাকে সেখান থেকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আর কী হয়েছে তা তাদের জানা নেই।

এই বিতর্কের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে—রাষ্ট্রের কাছে কি মানবিকতার কোনো স্থান আছে? অসুস্থ, মৃত্যুপথযাত্রী এমনকি মৃত বন্দিকেও হাতকড়া পরানোর নিয়ম কি কেবল নিরাপত্তার অজুহাত, নাকি এটি বর্বরতার বৈধীকরণ?

এমন অমানবিক চিত্র শুধু একটি ব্যক্তির নয়, বরং পুরো সমাজের আত্মাকে আঘাত করছে। আইন-শৃঙ্খলার নামে যদি শেষ মুহূর্তেও একজন মানুষকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়, তবে মানবাধিকারের চর্চা কেবল বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

এবি/সিএস