বিশ্ব বাণিজ্যের মুখোমুখি চরম সংকট: হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন ইরানের পার্লামেন্টে
রোববার দেশটির পার্লামেন্ট এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে তারা।

আন্তঃবাণী প্রতিবেদনঃ
বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল মুহূর্তে নতুন করে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালল ইরান। আজ রোববার দেশটির পার্লামেন্ট এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে তারা। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও বাকি, তবে এরই মধ্যে এ ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে।
তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বুক চিরে বয়ে চলা এই হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়। এই পথ ব্যবহার করে সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। ফলে প্রণালিটি বন্ধ হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভি আজ জানায়, পার্লামেন্টে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত এখন পাঠানো হবে সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে, যেটি দেশের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে, যা কার্যকর হলে তা হতে পারে বর্তমান শতাব্দীর অন্যতম গুরুতর কৌশলগত পাল্টা আঘাত।
ইরানের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমান্ডার এসমাইল কোসারি এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
> “এই সিদ্ধান্ত এখন আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। প্রয়োজন পড়লে তা কার্যকর করা হবে।”
এই ঘোষণা এমন সময় এল, যখন ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক চরম তিক্ততায় উপনীত হয়েছে। পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা, মোসাদ সংক্রান্ত গুপ্তচর ইস্যু, এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ—সব মিলিয়ে পুরো অঞ্চল এক রকম যুদ্ধের প্রহর গুনছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি নতুন নয়, তবে এবার তা পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়ায় পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এটি বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে আকস্মিক বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন এবং সামরিক উত্তেজনার আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি ওপেকভুক্ত দেশগুলোও এখন গভীরভাবে নজর রাখছে ইরানের এই সিদ্ধান্তের দিকেই। কারণ হরমুজ প্রণালি শুধু একটি জলপথ নয়, এটি বিশ্বশক্তির গতিপথ নির্ধারণকারী এক কৌশলগত প্রাণরেখা।
বিশ্ব এখন অপেক্ষায়—ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ কী সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ এবং পুরো বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তা।
এবি/সিএস