ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, তেহরানের অবস্থান অনড়: পারমাণবিক আলোচনায় রাজি নয় ইরান
ইসরায়েলের টানা এক সপ্তাহব্যাপী হামলার মধ্যে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনও আলোচনাই এখন সম্ভব নয়। ইউরোপ আলোচনা ফের শুরু করতে চাইলে, যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করছে সরাসরি এই সংঘাতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা।
আন্তঃবাণী প্রতিনিধিঃ
ইসরায়েলের টানা এক সপ্তাহব্যাপী হামলার মধ্যে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনও আলোচনাই এখন সম্ভব নয়। ইউরোপ আলোচনা ফের শুরু করতে চাইলে, যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করছে সরাসরি এই সংঘাতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা।
শুক্রবার রাতভর ইসরায়েল ইরানের পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও একটি পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এর পাল্টা জবাবে শুক্রবার সকালেই ইরান দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ারশেভা শহরে আবাসিক এলাকা, অফিস ও শিল্প ভবনের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার দিনের পর বিভিন্ন এলাকায় পুনরায় বিমান হামলার সতর্কতা বাজানো হয় এবং তেলআবিব, নেগেভ ও হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের প্রাথমিক খবর পাওয়া গেছে।
জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা ও কাতারের তৎপরতা
ইসরায়েলের হামলায় ইরান-কাতার সীমান্তবর্তী বিশাল গ্যাস ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কাতার জ্বালানি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে। তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে যাতে বৈশ্বিক গ্যাস সরবরাহে ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ, কিন্তু আশার আলো ক্ষীণ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, "ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না।" তবে তিনি জেনেভায় ইউরোপীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন যেখানে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে কূটনৈতিক পথ তৈরি করতে চায়।
ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, "ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত আমরা, কিন্তু একেবারে শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব কখনও মেনে নেব না, বিশেষ করে ইসরায়েলি হামলার মধ্যে।"
মানবিক বিপর্যয়: ইরানে ৬৩৯ জন নিহত, ইসরায়েলে ২৪
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন। অন্যদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ২৪ জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।
তেহরানে একটি আবাসিক ভবনে ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটেছে বলে স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানায়।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রচার যুদ্ধ
ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরানে "শাসনব্যবস্থার প্রতীকগুলোকে" লক্ষ্য করে হামলা বাড়াবে, যাতে আয়াতুল্লাহ খামেনির সরকার ভেঙে পড়ে। ইরান এর পাল্টা হিসাবে মুসাদ গোয়েন্দা সংস্থার এক এজেন্টকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে, যিনি হোয়াটসঅ্যাপে ইসরায়েলকে তথ্য পাঠাচ্ছিলেন বলে জানায় ইরানি রাষ্ট্রমাধ্যম।
ইরানে সরকারপন্থী জনসভা হচ্ছে, যেখানে "ক্রোধ ও বিজয়ের মিছিল", "সংহতি ও প্রতিরোধের বার্তা" শোনা যাচ্ছে।
তবে ইরানি বিরোধীদলগুলো মনে করছে, এই যুদ্ধ তাদের জন্য এক সম্ভাবনার সময় হলেও বড় ধরনের বিক্ষোভ এখনই শুরু করতে তারা সতর্ক।
পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির ভিত্তিতে আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও, ২০১৮ সালে ট্রাম্প সেটি বাতিল করেন। নতুন করে আলোচনার চেষ্টা গত ১২ জুন ইসরায়েলের হামলার পর ভেস্তে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও আরাকচির মধ্যে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়।
ইসরায়েল এখনও পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এই বিশ্বাস রাখে যে তারা পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা কোনোভাবেই পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটাতে চায় না।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনও অনিশ্চিত, তবে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
এবি/সিএস
