গাজায় খাবারের সন্ধানে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন হাজারো মানুষ
গত দুই দিনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর আনা ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজার চিকিৎসকরা।

আন্তঃবাণী প্রতিবেদকঃ
গাজার বাসিন্দা হিন্দ আল-নাওয়াঝা প্রতিদিনই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বের হন খাবারের সন্ধানে। উত্তরের বেইত লাহিয়ার এই ৩৮ বছর বয়সী নারী বলেন, “তুমি হয় বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে ফিরে আসো, আর তারা খুশি হয়, নয়তো তোমার মরদেহে কাপড় জড়ানো থাকে। কিংবা ফিরে আসো খালি হাতে, আর বাচ্চারা কাঁদে।”
চার সন্তানের জননী হিন্দ প্রতিদিন তার বোন মাজৌজা আল-নাওয়াঝাকে নিয়ে কয়েক মাইল পথ পাড়ি দেন। চারপাশে গুলির শব্দ, মাঝেমধ্যে ট্যাংকের গর্জন—এই বিভীষিকাময় পরিবেশে তারা ধ্বংসস্তূপের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন, শুধু বেঁচে থাকার জন্য।
গত দুই দিনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর আনা ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজার চিকিৎসকরা।
শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারই অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি গুলিতে ও বিমান হামলায়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১২ জন, যারা মধ্য গাজার একটি মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন।
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ২৮ জন প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি মসজিদের কাছে এক হামলায় নারী ও শিশুসহ ১২ জন নিহত হন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবারের এসব ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তারা জানায়, সেনাবাহিনী এমন এলাকায় গুলি চালিয়েছে যেখানে তাদের বাহিনী মোতায়েন ছিল এবং আশঙ্কা ছিল নিরাপত্তা হুমকির। তারা বেসামরিক হতাহতের অভিযোগ পর্যালোচনা করছে বলেও জানানো হয়।
গাজার মানুষদের কাছে এখন খাবার পাওয়াটা জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি দিনই তারা পায়ে হেঁটে, গুলি-বোমার আওয়াজ উপেক্ষা করে, সামান্য খাদ্যের আশায় যাত্রা করছেন—ফিরবেন কি না, তা জানেন না কেউ।
এই মানবিক বিপর্যয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিরবতা ও ত্রাণ প্রচেষ্টার অকার্যকারিতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে এখনো বহু পরিবার প্রতিদিন সেই অন্ধকার পথে বেরিয়ে পড়ছে—ক্ষুধার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তা।
এবি/সিএস