করোনা ও ডেঙ্গুর দ্বৈত প্রকোপ: চাপে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, প্রস্তুত কি সরকার?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই রোগ একসাথে মোকাবিলা করা সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রাপ্যতা, এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

করোনা ও ডেঙ্গুর দ্বৈত প্রকোপ: চাপে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, প্রস্তুত কি সরকার?
বাংলাদেশে একইসাথে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়, কিন্তু এবছর একই সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও বাড়তে থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে সর্বমহলে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ক্রমাগত বাড়ছে এবং ইতোমধ্যে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও ভারতের নতুন ধরনের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণ বাড়ার পর বাংলাদেশেও মানুষ করোনা পরীক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, যা ইঙ্গিত করে সংক্রমণের সম্ভাব্য বিস্তার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই রোগ একসাথে মোকাবিলা করা সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রাপ্যতা, এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত কি সরকার?
করোনা ও ডেঙ্গুর এই দ্বৈত চাপে সরকারের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করছেন—সরকার সবরকম প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনার টিকা ও পরীক্ষার কিটের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “বাইরে থেকেও আরও কিট ও টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। হাসপাতালগুলোও করোনা পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত।”
তিনি আরও জানান, করোনা সংক্রমণ কিছুদিন স্তিমিত থাকায় প্রস্তুতির গতি কমে গিয়েছিল, তবে এখন সেটি পূর্ণদমে চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই ১৭ লাখ করোনা টিকা দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নতুন করে করোনা শনাক্তকরণ কিট পৌঁছানো হবে।
জনস্বাস্থ্য ও মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় আগের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেই এবার পরিস্থিতি সামলানো তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। “২০২০ সালের যারা ছিলেন, তারাই এখনও দায়িত্বে রয়েছেন। নতুনদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।
তবে ডেঙ্গু মোকাবিলার ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেন। তার মতে, “বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ডেঙ্গুতে অভ্যস্ত হলেও আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনও মূলত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক। জনস্বাস্থ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার চেষ্টা হয়নি।”
ডা. মুশতাক আরও বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মতো উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। “আমাদের বর্তমান জনবল দিয়েই স্তরভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে হাসপাতাল—এসবকে সেকেন্ডারি হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
তাঁর মতে, করোনা সংক্রমণ কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে না। তবে আগের ধারার কার্যক্রম চালিয়ে গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এবি/এসএফ