নেলসন ম্যান্ডেলা – সংগ্রামের প্রতীক

নেলসন ম্যান্ডেলা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার নয়, ছিলেন গোটা বিশ্বের প্রেরণার নাম। কীভাবে এক সাধারণ মানুষ হয়ে উঠলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক? দেখে নিন তাঁর জীবনের অবিশ্বাস্য গল্প, ২৭ বছরের কারাজীবন থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার অসাধারণ যাত্রা।

Jun 11, 2025 - 22:43
Jun 12, 2025 - 14:19
 0

বিশ্ব ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের নাম শুনলেই এক অনন্য সংগ্রামের কথা মনে পড়ে। তাদের কণ্ঠ, তাদের নির্যাতন, তাদের বিজয় – সবকিছুই হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তেমনই একজন মানুষ, নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন একা, কিন্তু হয়ে উঠেছিলেন একটি জাতির প্রতিচ্ছবি।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

১৮ জুলাই ১৯১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সকেই অঞ্চলে জন্ম নেন রোলিহলাহলা ম্যান্ডেলা। ছোটবেলাতেই তিনি ‘নেলসন’ নামটি পান স্কুল শিক্ষকের কাছ থেকে। তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে আইনজীবী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল অন্য—দেশকে মুক্ত করা।

বর্ণবাদ ও রাজনীতিতে প্রবেশ

সেসময়ের দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের প্রাধান্য ছিল সর্বত্র। কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে ছিল চরম বৈষম্য, অবমাননা, ও অধিকারহীনতা। এই অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ম্যান্ডেলা। ১৯৪৪ সালে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (ANC) যোগ দেন। শুরু করেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। কিন্তু পরে, নিপীড়ন বাড়তে থাকায় তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন।

২৭ বছরের কারাবরণ

১৯৬২ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রোবেন দ্বীপের সেই কারাগারে কাটে তার জীবনের ২৭টি দীর্ঘ বছর। কিন্তু তাকে ভাঙা যায়নি। বরং কারাগারেই তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিরোধের প্রতীক। বিশ্বব্যাপী তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মুক্তির দাবিতে আন্দোলন।

মুক্তি ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবির্ভাব

১৯৯০ সালে ম্যান্ডেলা মুক্তি পান। তখন বয়স তার ৭১ বছর। এরপরের ৪ বছর তিনি দেশের শান্তিপূর্ণ রূপান্তরে অবদান রাখেন। এবং অবশেষে, ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় এসেই তিনি গড়ে তোলেন ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’, যা ছিল একটি ভাঙা জাতিকে জোড়া লাগানোর উদ্যোগ।

সংগ্রামের প্রতীক

নেলসন ম্যান্ডেলা কেবল একজন রাজনীতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন আশা, সহনশীলতা, ও ক্ষমার জীবন্ত প্রতিমূর্তি। ২০১৩ সালে তার মৃত্যু হলেও তার আদর্শ আজও কোটি কোটি মানুষের অন্তরে জীবিত। তিনি প্রমাণ করেছেন—স্বপ্ন দেখলে, সংগ্রাম করলে, এবং ভালোবাসতে জানলে পরিবর্তন আনা সম্ভব।