জ্যাক দ্য রিপার – ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় খুনি
১৮৮৮ সালের লন্ডনে আতঙ্কের আরেক নাম ছিল ‘জ্যাক দ্য রিপার’। আজও যার পরিচয় অজানা, সেই ধারালো খুনির রহস্য ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য তত্ত্ব ও গল্প। এই ভিডিওতে জানুন তার নৃশংস খুন, তদন্ত এবং রহস্যের পেছনের ইতিহাস।
ইতিহাসে এমন কিছু খুনের কেস আছে যেগুলো সময়ের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলেও আজও আলোচনায়। তেমনি এক নাম ‘জ্যাক দ্য রিপার’। উনিশ শতকের লন্ডনে একের পর এক নারকীয় খুন, আর তার পেছনে থাকা এক রহস্যময় ছায়ামূর্তি—যার পরিচয় আজও অজানা। কে ছিল সে? কেন করেছিল এই খুনগুলো? চলুন, ডুবে যাই ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় খুনির কাহিনিতে।
হত্যার পটভূমি – হোয়াইটচ্যাপেল, লন্ডন
১৮৮৮ সাল, ইংল্যান্ডের ইস্ট লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর অপরাধ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। এই এলাকাতেই শুরু হয় একের পর এক ভয়াবহ খুন। প্রথম খুন ৩১ আগস্ট, ভিকটিম—মেরি অ্যান নিকোলস। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় খুন—অ্যানি চ্যাপম্যান। মৃতদেহগুলো ছিল অত্যন্ত নির্মমভাবে খণ্ডিত। হত্যাকারীর মুনশিয়ানা ছিল শারীরবৃত্তীয়।
হত্যার ধরন ও কৌশল
জ্যাক দ্য রিপারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক ছিল তার পদ্ধতি। সে শুধু হত্যা করত না, শিকারদের দেহ কেটে বিভৎস করে তুলত।
কিডনি, ইউটেরাস, হার্ট—এমনভাবে কাটা ছিল যেন একজন অভিজ্ঞ সার্জন করেছে। এসব থেকে ধারণা করা হয়, খুনি হয়ত চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
পুলিশি তদন্ত ও সাসপেক্ট
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপর হলেও, খুনির পরিচয় কখনোই নিশ্চিত করা যায়নি।
ধারণা করা হয় প্রায় ১০০ জন সন্দেহভাজন ছিল। এর মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, ধনী ব্যবসায়ী, এমনকি রানীর পরিবারের এক সদস্যও!
তবে কোনো প্রমাণই ছিল না চূড়ান্ত। রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন খুনি পত্রের মাধ্যমে ‘জ্যাক দ্য রিপার’ নামটি ব্যবহার করে আত্মপ্রকাশ করে।
মিডিয়া হাইপ ও জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
এই খুনগুলো নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তৈরি হয় অভূতপূর্ব সাড়া। ভয় আর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে পুরো লন্ডন শহর।
‘Dear Boss’ নামে এক চিঠি আসে পুলিশের কাছে, যেখানে লেখা ছিল—“আমিই জ্যাক দ্য রিপার!”
এই চিঠি থেকে খুনির নাম জ্যাক দ্য রিপার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে অনেকেই মনে করেন, এই নাম ও চিঠি ছিল মিডিয়ারই সৃষ্টি।
থেমে যাওয়া খুন ও পরবর্তী গবেষণা
শেষ খুন হয় সম্ভবত ৯ নভেম্বর, ১৮৮৮—ভিকটিম ছিল মেরি জেন কেলি। এরপর আচমকাই থেমে যায় সব।
আজও কেউ জানে না—জ্যাক মারা গিয়েছিল, এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল, না কি ছিল পুলিশেরই কেউ!
বিভিন্ন লেখক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ শতবর্ষ ধরে এর পেছনের সত্য উন্মোচনের চেষ্টা করছেন। তবে রহস্য আজও রহস্যই থেকে গেছে।
জ্যাক দ্য রিপারের উত্তরাধিকার ও প্রভাব
জ্যাক দ্য রিপার আজও পপ কালচারে জ্বলন্ত নাম। তার জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে শতাধিক বই, বানানো হয়েছে সিনেমা ও ডকুমেন্টারি।
তবে আসল প্রশ্ন থেকে গেছে—কে ছিল এই খুনি?
জ্যাক দ্য রিপার আমাদের শেখায়, প্রযুক্তির অভাবে কত বড় অপরাধ অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে।
এটি শুধুই ইতিহাস নয়, এক চিরন্তন অজানা গল্প।
এমন অনেক রহস্য আজও পৃথিবীর বুক জুড়ে ছড়িয়ে আছে, যার উত্তর ইতিহাস কখনোই দেয়নি। জ্যাক দ্য রিপার, সেই ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় অধ্যায়। আপনি কী মনে করেন—জ্যাক দ্য রিপারের পরিচয় একদিন জানা যাবে?