ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ছায়ায় তেলের বাজারে টানাপোড়েন: ট্রাম্পের নীরব কৌশলে কমল দাম
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির উত্তাপ যখন তেলের বাজারে আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছিল, ঠিক তখনই হোয়াইট হাউজের এক ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এল বিনিয়োগকারীদের মনে।

আন্তঃবাণী প্রতিবেদকঃ
মধ্যপ্রাচ্যের মরুতে যখন বিস্ফোরণের ধোঁয়া উড়ছে, তখন বিশ্ব অর্থনীতির চাকা যেন হঠাৎ কাঁপতে শুরু করেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির উত্তাপ যখন তেলের বাজারে আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছিল, ঠিক তখনই হোয়াইট হাউজের এক ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এল বিনিয়োগকারীদের মনে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে জড়াবে কি না, তা ঠিক করতে তিনি আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন। তার এই ‘দুই সপ্তাহের নীরবতা’ যেন বিশ্ববাজারে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস হয়ে আসে।
দাম কমলেও বাজার অস্থির
শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১.৮৯ ডলার কমে দাঁড়ায় ৭৬.৯৬ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ২.৪ শতাংশ কম। তবে সাপ্তাহিক গড় হিসেবে এটি এখনও প্রায় ৪ শতাংশ বেশি রয়েছে।
ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের জুলাই চুক্তি স্থির থাকলেও অগাস্ট চুক্তিতে দেখা গেছে সামান্য উর্ধ্বগতি—২৭ সেন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩.৭৭ ডলারে।
যুদ্ধের আঁচে জ্বলছে সরবরাহ লাইন
বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ইরানের একটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়, যার জবাবে তেহরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই পাল্টাপাল্টি হামলার ফলে বাজারে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়, এবং একদিনেই তেলের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে যায়।
ইরান ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়তে পারে, যা বিশ্বজুড়ে তেলের সরবরাহে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। ইতিমধ্যে ইরান হুমকি দিয়েছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে—যা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল বিশ্ববাজারে প্রবাহিত হয়।
ভাসমান মজুদ ও চীনের দিগন্ত
রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, ইরান আপাতত তেল রপ্তানি বন্ধ করেনি। বরং নিজেদের তেল ভাসমান ট্যাঙ্কারে ভরে রেখেছে এবং সেগুলোর অবস্থান সরিয়ে নিয়েছে চীন উপকূলের কাছাকাছি। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয়, যুদ্ধকালীন সময়েও আয়ের উৎস বন্ধ করতে রাজি নয় তেহরান।
‘এক চুলেও চড়তে পারে ১০০ ডলার’
বিশ্লেষক অ্যাশলে কেলটি আশঙ্কা করছেন, “এই সংঘাত যদি হরমুজ প্রণালীর দিকে গড়ায় এবং ইরানে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।” তবে তিনি একইসঙ্গে উল্লেখ করেন, “দামের পতন ঘটিয়ে ৬০ ডলারে নামার কোনো সম্ভাবনাও আপাতত নেই।”
সামনে কী?
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের দিকে। দুই সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সরাসরি জড়ালে পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হবে—তেলের দামে আকাশছোঁয়া উত্থান ঘটবে, বিশ্ববাণিজ্য থমকে যেতে পারে। আবার কূটনৈতিক সমঝোতা হলে স্বস্তির পথ খুলে যেতে পারে।
কিন্তু এই যুদ্ধ কেবল বাজার নয়, রাজনীতির মঞ্চেও অনিশ্চয়তার ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। এটি কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত? নাকি আবারও কৌশলের ছদ্মাবরণে এক নতুন ভূরাজনৈতিক রূপান্তর? সেই প্রশ্ন আজও হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে—জবাব এখনও মেঘে ঢাকা।
এবি/সিএস