ইরান বনাম ইসরায়েল – পরমাণু যুদ্ধ কি আসন্ন? সামরিক শক্তির বিশ্লেষণ

মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী — ইরান এবং ইসরায়েল। একদিকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র, অন্যদিকে একটি পশ্চিমা সমর্থিত, টেকনোলোজিক্যালি অ্যাডভান্সড রাষ্ট্র। কিন্তু যদি এই দুই শক্তি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে ফলাফল কী হতে পারে?

আসুন দেখে নেই তাদের সামরিক ও কুটনৈতিক শক্তির পার্থক্য

সামরিক বাজেট ও বাহিনী

ইরান:

• বার্ষিক সামরিক বাজেট: প্রায় $২০ বিলিয়ন
  
  

• ইরানের সেনা সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৫ লক্ষ
  
  

• এছাড়া বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) এবং বেসমারিক মিলিশিয়া রয়েছে
  
  

• আছে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, বিশেষ করে শাহাব ও ফাতেহ সিরিজ

ইসরায়েল:

• ইসরায়েলের বার্ষিক সামরিক বাজেট: $২৩–২৪ বিলিয়ন
  
  

• ইসরায়েলের সেনা সদস্য সংখ্যা প্রায় ১.৭ লক্ষ (আছে অতিরিক্ত ৪.৫ লক্ষ রিজার্ভ ফোর্স)
   

• ইসরায়েলের আছে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক যুদ্ধবিমান ও ড্রোন প্রযুক্তি
  
  

• তাদের ডিফেন্স সিস্টেমে আছে বিশ্বখ্যাত আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং, অ্যারো সিস্টেম
  

সামগ্রিকভাবে, প্রযুক্তি ও ইন্টেলিজেন্সের দিক থেকে ইসরায়েল এগিয়ে, তবে ইরান সংখ্যায় বেশি এবং দীর্ঘ রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্রে শক্তিশালী।

বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা

ইসরায়েল:

• ইসরায়েলের আছে F-35I Adir, F-15, F-16 যুদ্ধবিমান
  
  

• রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক ড্রোন
  
  

• আছে দীর্ঘ পাল্লার নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র
  
  

• প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে ইসরায়েল
  
  

ইরান:

• তাদের আছে পুরনো প্রযুক্তির মিগ ও SU সিরিজের যুদ্ধবিমান
  
  

• নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র
  
  

• সাম্প্রতিক সময়ে ইরান নিজেদের হামলা করার সক্ষমতা বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ ও হুথিদের সমর্থনে

পারমাণবিক শক্তি

ইসরায়েল:

• আনঅফিশিয়াল হলেও ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৮০–৯০ টি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
  
  

• ইসরায়েলের আছে পৃথিবীর অন্যতম গোপন পারমাণবিক প্রোগ্রাম
  
  

• পারমানবিক আক্রমনের জন্য আছে সাবমেরিন সিস্টেম
  
  

ইরান: 

• তথ্যসুত্রমতে এখনও কোনো সক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র নেই ইরানের
  
  

• তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৮৪% পর্যন্ত পৌঁছেছে
  
  

• IAEA ও পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করে, ইরান কয়েক মাসেই বোমা তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে

ভূরাজনৈতিক জোট

ইসরায়েল:

• ইসরায়েলের সাথে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, এবং আরব বিশ্বের কিছু দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েল যুদ্ধে জড়ালে যারা ইসরায়েলের পাশে দারাবে।
  
  

• ন্যাটো বাহিনী সরাসরি না থাকলেও ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন নিশ্চিত
  
  

ইরান:

• ইরানের রয়েছে রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্পর্ক
  
  

• এছাড়াও হিজবুল্লাহ, হুথি মিলিশিয়া, এবং শিয়া মিত্রগোষ্ঠী রয়েছে
  
  

• বৈশ্বিকভাবে ইরান কূটনৈতিক চাপ এবং অর্থনৈতিক অবরোধে ভুগছে

সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি ও বিশ্লেষণ

যদি সরাসরি যুদ্ধ হয়, তাহলে…

• ইসরায়েল প্রযুক্তি, গোয়েন্দা এবং এয়ার সুপেরিওরিটির মাধ্যমে প্রাথমিক ধাক্কা দিতে সক্ষম
  
  

• ইরান পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশকে অস্থিতিশীল করতে পারে
  
  

• পুরো অঞ্চল জ্বলে উঠবে, যার প্রভাব পড়বে বিশ্ববাজার ও রাজনীতিতে

বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্মুক্ত যুদ্ধ না হয়ে এটি সম্ভবত স্নায়ুযুদ্ধ বা প্রতিনিধির মাধ্যমে সংঘাত হিসেবেই চলবে। তবে যেকোনো ভুল হিসেব পুরো অঞ্চলকে আগুনে পরিণত করতে পারে।

ইরান বনাম ইসরায়েল – এ লড়াই কেবল অস্ত্র বা সেনা নিয়ে নয়, এটি একটি আদর্শ ও প্রভাব বিস্তার করার লড়াই।