রওশনপন্থি জাপার মহাসচিব মামুনুর রশীদ রিমান্ডে
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে থেকে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আন্তঃবাণী প্রতিনিধি
ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে অন্য দেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের পরিদর্শক মো. আখতার মোর্শেদ কাজী মামুনুর রশিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এনায়েতের জামানতকৃত মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে মামুনুর রশীদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, “এ আসামি বিমানবন্দর থেকে এনায়েতকে রিসিভ করে হোটেলে রাখে। সেখানে থাকার খরচ তিনি বহন করেন। এনায়েতের সঙ্গে মিলে তিনিসহ অন্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছেন। তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত, এত টাকা কোথায় পেয়েছেন—এ বিষয়গুলো জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাই।”
মামুনুর রশীদের পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল হক ফয়সাল রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘মামুনুর রশীদের সঙ্গে তার যোগাযোগের সিডিএমএস আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে? ভুয়া দাবির প্রেক্ষিতে এনায়েতের সঙ্গে তাকে জড়ানো হয়েছে। এটা একটা মিথ্যা মামলা।’’ পরে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে সিডিএমএস দেখান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ূম হোসাইন নয়ন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করে বলেন, ‘‘এনায়েতের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেরানোর জন্য, নির্বাচন বাতিল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তারা ‘র’ এর এজেন্ট। তার ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। রিমান্ড না পেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে চলা ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানা যাবে না।”
পরে বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে থেকে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক চলাচল করতে দেখা যায় আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীকে। এ সময় তার গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় এবং তার কাছ থেকে দুইটি আইফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে ফোন বিশ্লেষণ করে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম চৌধুরী জানান, তিনি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এবং বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে এসে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী সরকারি ও নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা এবং ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। তিনি আরও জানান, আমেরিকান সরকার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে হতাশ এবং আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় বাতিল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনায়েত করিম চৌধুরী দাবি করেন, নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে কারা অংশ নেবে এবং সরকার প্রধান কে হবেন তা আমেরিকা নির্ধারণ করবে। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সরবরাহ করতেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী বর্তমানে অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন, যা দেশের জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
এবি/সিএস