রহস্যময় গ্রাম যা এক রাতে উধাও হয়ে গেল | Village of the Dead

১৯৩০ সালে কানাডার একটি গোটা গ্রাম রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে যায়, কোনো চিহ্ন ছাড়াই। কোথায় গেল সেই মানুষগুলো? এলিয়েন নাকি অন্য কোনো রহস্য? জানুন “Village of the Dead” রহস্যের সত্য কাহিনি। আরও ডকুমেন্টারি পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আন্তঃবাণী।

Jul 14, 2025 - 17:09
 0

২৬ নভেম্বর ১৯৩০ সালে কানাডার ডেইলি জার্নাল পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল “ভিলেজ অফ দ্য ডেড”
এই খবরটি পুরো কানাডায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়, কারণ উত্তর কানাডায় একটি গোটা উপজাতি রাতারাতি কোনো চিহ্ন ছাড়াই হঠাৎ করে কোথাও উধাও হয়ে গিয়েছিল।

আন্তঃবাণীর আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো সেই রহস্যময় ঘটনাটি। 


উত্তর কানাডার দূরবর্তী অঞ্চলে লেক এনজি কো টিলের তীরে একটি ছোট গ্রামে নুমি ট্রাইব বাস করত।
সেখানে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ বসবাস করত, যারা লেক থেকে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত।
এটি উত্তর কানাডার সেই অঞ্চল যেখানে কঠিন আবহাওয়ার কারনে হাজার হাজার নয়, বরং লাখ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাতে গোনা মাত্র কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করে। লেকে মাছ ধরার পাশাপাশি আশেপাশের এলাকায় অন্যান্য পশু শিকারও হতো, আর এর জন্য অনেক ভ্রমণ পিপাসু শিকারিও এখানে আসত।

 নভেম্বর ১৯৩০ এর এক ভয়াবহ ঠান্ডা দিন।
জো লিভার নামের এক শিকারি এখানে শিকারে এসেছিল। শিকারে এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল যে বুঝতেই পারেনি কখন সন্ধ্যা নেমে গেছে।
তার মনে ছিল, কাছেই নুমি ট্রাইবের বসতি।  আগের মতো লেকের তীরে নুমি ট্রাইবের গ্রামে গিয়ে রাতটা কাটাবেন।
আতিথেয়তার জন্য এই গ্রামের মানুষ বাইরের মানুষর কাছে খুবই প্রশংসিত ছিল।  সন্ধ্যা নামতেই জো লিভার তার জিনিসপত্র গুছিয়ে গ্রামের দিকে রওনা হলো।

সেই রাতে আকাশ ছিল চাদের আলোয় আলোকিত, কিন্তু চারপাশে ছিল সম্পূর্ণ নীরবতা।  না কোনো মানুষ দেখা যাচ্ছিল, না কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
জো কেবল তার নিজের পায়ের শব্দটাই শুনতে পাচ্ছিল।  যদিও আগে এমন ঘটেছে, তবুও সেদিন কিছু একটা অস্বাভাবিক লাগছিল।

সাধারণত সে যখনই গ্রামটির কাছে আসত, তখন কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা যেত, কারণ গ্রামের মানুষ কুকুর পুষে রাখত। কিন্তু সেদিন গ্রামটির কাছে পৌঁছালেও চারপাশে ছিল কেবল শূন্যতা এবং নিস্তব্ধতা।  এটি অনুভব করে জো তার পায়ের গতি বাড়িয়ে দিল।  তার মনে হচ্ছিল হয়তো গ্রামের মানুষ ঘুমিয়ে আছে বা কোথাও গেছে।

দূর থেকেই সে গ্রামটির তাঁবুগুলো দেখতে পেল, যেগুলোর একটি থেকে ধোঁয়া উঠছিল।  কিন্তু কাছে গিয়ে কোনো শব্দ শোনা গেল না। অবশেষে যখন জো গ্রামে ঢুকল, তখন অবাক হয়ে দেখল সেখানে না আছে কোনো মানুষ, না আছে কোনো প্রাণী।

তবে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, কিছু ঘরের চুলা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল, যেন ভেতরে কেউ আছে।  সে এলোমেলোভাবে একটি ঘরে ঢুকল, কিন্তু ভেতরে কেউ ছিল না।  এভাবেই প্রতিটি ঘর ছিল একেবারেই ফাঁকা।

হয়তো জো এই দৃশ্য উপেক্ষা করে সেখান থেকে চলে যেত,  কিন্তু একটি বিষয় তাকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিল।
কিছু ঘরে রান্নার হাঁড়ি চুলায় রাখা ছিল,  কিন্তু তাতে রাখা খাবার পুড়ে গিয়েছিল।  অর্থাৎ কেউ রাতের খাবারের জন্য রান্না বসিয়েছিল, কিন্তু তা খাওয়া সম্ভব হয়নি।

এমনকি গ্রামের মহিলারা যে কাপড় সেলাই করছিল, তা আধা সেলাই করা অবস্থায় পড়েছিল, এবং সুঁইয়ে সুতো লাগানো ছিল।
এটি দেখে মনে হচ্ছিল, গ্রামের মানুষ হঠাৎ করেই সবকিছু ফেলে কোথাও চলে গেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা গেল কোথায়?

জো পুরো গ্রাম খুঁজতে শুরু করল।  দেখল গ্রামের মানুষদের পোষা কুকুর গুলোর গলায় দড়ি বাঁধা ছিল, কিন্তু তারা না খেতে পেয়ে মারা গেছে।   যদিও কুকুরগুলোর সামনে খাবার রাখা ছিল, কিন্তু খাওয়ানোর মতো কোনো মানুষ সেখানে ছিল না। এক জায়গায় জো একটি কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পেল। 

 দেখে মনে হচ্ছিল এটি বেশিদিন আগে খোডা হয়নি।
এই দৃশ্য দেখে জো আতঙ্কে কেঁপে উঠল।  রাতের বেলা একা এই দৃশ্য দেখে সে ভয়ে অস্থির হয়ে গেল।

এই অঞ্চলের মানুষ যখন কোথাও যায়, তারা তাদের কুকুর নিয়ে যায়।  কিন্তু এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, এখানে কিছু অস্বাভাবিক ঘটেছে।  কোনো অদৃশ্য ঘটনা তাদের হঠাৎ করে চলে যেতে বাধ্য করেছে।
এতটাই তাড়াহুড়ো যে তারা তাদের কুকুর, পোশাক, খাবার এবং জ্বলন্ত আগুন পর্যন্ত ফেলে চলে গেছে।

জো আর বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারল না এবং দ্রুত কাছের টেলিগ্রাফ অফিসে পৌঁছে গেল।
সেখান থেকে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ ক্যাম্পে খবর পাঠাল এবং চোখে যা যা দেখেছে তার সব কিছু জানাল। পুলিশ যখন গ্রামে পৌঁছাল, তখন জো যা বলেছিল সব সত্যি প্রমাণিত হলো।

পুলিশের সন্দেহ হলো, হয়তো এখানে কারো দ্বারা হামলা হয়েছে এবং গ্রামের সব মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে।
কিন্তু যদি এমন হতো, তবে রক্তের দাগ কোথাও না কোথাও পাওয়া যেত।
না পেলেও লড়াইয়ের অন্তত কোনো চিহ্ন থাকত।  তবে সেইরকম কোন এভিডেন্স পাওয়া গেল না।

পুলিশ গ্রামবাসীদের খুঁজে বের করার জন্য সার্চ অপারেশন শুরু করল।  এই সার্চ অপারেশনে একটি অদ্ভুত বিষয় দেখা গেল, যা জোও খেয়াল করেনি।
সারা গ্রাম বরফে ঢাকা ছিল, কিন্তু বরফের উপর কোনো পায়ের ছাপ ছিল না।
শুধু একজনের পায়ের ছাপ ছিল—জোর নিজের পায়ের ছাপ।

অর্থাৎ, যদি জো ছাড়া আর কেউ আসেনি এবং যায়নি, তবে গ্রামের মানুষ গেল কোথায়?
লেকের উপরও বরফ জমে ছিল এবং গ্রামের নৌকাগুলো তীরেই ভেড়ানো ছিল। মৌসুমের এই সময়টাতে মাছ ধরার কাজও হতো না, তাই নৌকাগুলো মাটিতেই টেনে তুলে রাখা হতো।

যদি গ্রামের মানুষ লেক পাড়ি দিত এবং তাদেরকে কেউ লেকে ফেলে দিত,  তাহলে লেকের বরফ কোথাও না কোথাও ভেঙে যেত।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, গ্রামের মানুষ জোর আসার আট দিন আগেই নিখোঁজ হয়েছিল, কারণ কুকুরের মৃত্যু দু-একদিন না খাওয়ার কারণে হয় না।  ঘর থেকে ধোঁয়া ওঠা প্রমাণ করেছিল, তাদের উধাও হয়ে যাওয়ার বেশিদিন হয়নি, কারণ কাঠ নিভে গেলেও অনেকক্ষণ ধোঁয়া বের হতে থাকে।

পুলিশের সামনে অনেক প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কোনো উত্তর ছিল না।
মাসের পর মাস সার্চ অপারেশনের পর পুলিশ এই কেসকে “অমীমাংসিত” হিসেবে ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়।
সময়ের সাথে সাথে মানুষও ঘটনাটি ভুলে যেতে থাকে।

এই ঘটনার ৫০ বছর পর, ১৯৮৪ সালে রজার এবং নির্জল ব্লান্ডল নামের দুই লেখক একটি আর্টিকেল লেখেন এবং এই ঘটনার সাথে এলিয়েনদের সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন।  তাদের আর্টিকেলে বলা হয়, তারা যখন এলাকাটি এক্সপ্লোর করতে লেকের কাছে যান, তখন এক শিকারি এবং তার দুই ছেলের সাথে দেখা হয়।

 তাদের মতে, তারা প্রায়ই লেকের উপর দিয়ে উড়তে থাকা বিভিন্ন আকারের বস্তু দেখেছেন, যা ওই গ্রামটির দিকেই যাচ্ছিল, যেখানে এস্কিমো ট্রাইব থাকত।

এই গল্পের ভিত্তিতে বলা হয়, সম্ভবত সেই রাতে এলিয়েনরা নেমেছিল এবং গ্রামের সবাইকে তুলে নিয়ে গেছে।
তবে এলিয়েনদের উপস্থিতি বা তাদের আক্রমণের কোনো প্রমাণ এই দুই লেখকের কাছে ছিল না, তাই অধিকাংশ মানুষ এই গল্প বিশ্বাস করেনি এবং থিওরিটিকে বাতিল করে দেয়।

এরপর অনেকেই এস্কিমো ট্রাইবের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে নানা গল্প তৈরি করে।  কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ঘটনাটি প্রায় ১০০ বছর হতে চলেছে।
তবুও আজ পর্যন্ত এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই—  গ্রামের মানুষ কোনো চিহ্ন ছাড়াই কোথায় গেল?

লেকের ধারে পুরো গ্রাম হারিয়ে যাওয়ার এই ঘটনা আজও এক রহস্য হয়ে রয়ে গেছে।

আশা করি, রোমাঞ্চকর এই ভিডিওটি  আপনাদের ভালো লেগেছে। ভিডিওটি  ভালো লাগলে লাইক, শেয়ার সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। আন্তঃবাণী বাংলায় সারাবিশ্ব