৩য় বিশ্বযুদ্ধ - যদি শুরু হয় তাহলে কী হবে?
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা বিশ্বকে এক নতুন সংঘাতের মুখে দাঁড় করিয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র, সাইবার হামলা ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছে আধুনিক পরাশক্তিগুলো। এই পরিস্থিতিতে যদি ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তবে তা কেমন হবে? কে জড়াবে এতে, কী প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, আর কেমন হবে মানবতার পরিণতি—এই তথ্যচিত্রে বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেই ভয়ংকর সম্ভাবনার বাস্তব রূপরেখা।
মানব ইতিহাস যুদ্ধ ও সংঘর্ষে ভরপুর—কখনো বড়, কখনোবা ছোট।
কিন্তু যদি আগামিকাল থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে সেটা হতে পারে মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। উন্নত প্রযুক্তি, বিশাল সেনাবাহিনী এবং আরও জটিল কৌশল এতে ব্যবহার করা হবে।
কিন্তু এমন কিছু কি ঘটতে পারে? কোন দেশ গুলো এতে জড়াবে? আর এই যুদ্ধইবা কেমন হবে?
দেখছেন আন্তঃবাণী, আর আজ আমরা দেখব—যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়, তাহলে কী হতে পারে।
৩য় বিশ্বযুদ্ধ কি আসলেই শুরু হবে?
মানুষ বহু দশক ধরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছে।
১৯৬০-এর দশকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলা “কোল্ড ওয়্যার” এর সময় এই যুদ্ধ প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু সৌভাগ্যবশত, আমরা তা এড়িয়ে যেতে পেরেছিলাম।
কিন্তু যদি আগামীবার আমরা এতটা ভাগ্যবান না হই? তাহলে কখন শুরু হতে পারে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ?
এর উত্তর সহজ নয়। এই যুদ্ধ শুরু হতে পারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হত্যাকাণ্ড থেকে।
হতে পারে ভুল গোয়েন্দা তথ্যের কারণে। বা হতে পারে মূল্যবান সম্পদ নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব থেকে।
এভাবে বললে যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেক বেশি মনে হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনাটা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
আধুনিক যুদ্ধের পটভূমি
১৯৪৫ সালের পর থেকে পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ হয়েছে—ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, অসংখ্য গৃহযুদ্ধ।
যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ কেমন হতে পারে?
আগের বিশ্বযুদ্ধগুলোর মতো এবারও লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। এবং পৃথিবীকে পুনরুদ্ধার করতে লেগে যেতে পারে কয়েক দশক, হয়তো শতাব্দী।
ভবিষ্যতের সৈনিকরা হয়তো এক্সোস্কেলেটন পরে লড়বে—এগুলো হলো ধাতব ফ্রেম যা শরীরের চারপাশে বসে এবং শক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। যদিও তারা রোবোকপ হয়ে উঠবে না, তবে ভারী জিনিস বহন সহজ হবে।
ঘুরিয়ে আঘাত করার মতো অস্ত্রও হয়তো থাকবে। আর এই যুদ্ধ হতে পারে সমুদ্র বা আকাশে নয়, বরং মহাকাশে।
মহাকাশ যুদ্ধ এবং কল্পবিজ্ঞান
সেনাবাহিনী হয়তো এমন অস্ত্রযুক্ত স্যাটেলাইট নিয়ে লড়বে যেগুলো নিচের পৃথিবীতে প্রভাব ফেলতে পারে।
শুনতে কল্পবিজ্ঞানের মতো মনে হলেও এই অস্ত্রগুলো বাস্তব ও ভয়ংকর।
আশা করা যায়, কেউ এগুলো ব্যবহার করতে বাধ্য হবে না। কারণ এসব জিনিসের লক্ষ্য একটাই—মানুষ হত্যা করা।
যুদ্ধের ভবিষ্যৎ – মানুষ নয়, মেশিন
ভবিষ্যতের যুদ্ধ হতে পারে কম্পিউটারে। ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটই হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে থাকবে।
এমনও হতে পারে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ কোনো সহিংসতা ছাড়াই হবে।
সাইবার আক্রমণ
অন্য দেশের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া—এসবই এখন সম্ভাব্য যুদ্ধকৌশল।
আর এই যুদ্ধ হবে কীসের জন্য?
হতে পারে সম্পদের জন্য—বিশেষ করে সুপেয় পানির জন্য।
কারণ সুপেয় পানি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। যত দিন যাবে, দেশগুলোর মাঝে পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়বে।
কিভাবে শেষ হবে এই যুদ্ধ?
আশা করা যায়, ৩য় বিশ্বযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
এখনও পর্যন্ত যেটা আমাদের রক্ষা করেছে, তা হলো পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যখন জাপানে দুইটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, তখন ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
শহরগুলো পুনর্গঠনে লেগে গিয়েছিল বহু দশক। কিন্তু আজকের পারমাণবিক অস্ত্র সেই সময়ের তুলনায় হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। বিশ্বজুড়ে রয়েছে প্রায় ১৪,০০০ পারমাণবিক ওয়ারহেড, যার বেশিরভাগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের হাতে।
একটি দেশ যতই শক্তিশালী হোক, যদি তাদের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়—তাহলে সব শেষ।
আর যদি এক দেশ ছোঁড়ে, তাহলে অন্যরাও বসে থাকবে না। পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী।
কে জিতবে এই যুদ্ধে?
একদম কেউ না। একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বযুদ্ধ পুরো পৃথিবীকে বদলে দেবে চিরতরে। পৃথিবী আর আগের মতো থাকবে না।
তবে এর মানে এই নয় যে এখনই আতঙ্কে ঘুম হারাতে হবে। একটি বিশ্বযুদ্ধ, যাতে বহু দেশ জড়িয়ে পড়বে—তা শুরু হবার খুব একটা সম্ভবনা নেই।
যদি দু’টি দেশ নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়ায়, তাহলে অন্য দেশগুলো হয়তো নিরপেক্ষ থাকবে। কারণ, যুদ্ধ সর্বদাই ভয়াবহ। আর আমরা যুদ্ধ এড়াতে চাই—জিততে নয়।