পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে আপনি বাঁচবেন কিভাবে?
যদি আপনার সামনে একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়, তাহলে কী করবেন? কিভাবে বাঁচবেন?আন্তঃবাণীর এই তথ্যভিত্তিক ডকুমেন্টারিতে জানুন পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর মুহূর্তগুলো কেমন হয় এবং কোন সিদ্ধান্তগুলো আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। পুরো ভিডিওটি দেখুন এবং সচেতন থাকুন।
সাক্ষাৎ কেয়ামত চোখের সামনে! একটি পারমাণবিক বোমা আপনার চোখের সামনেই সব ধ্বংস করে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছে। মুহূর্তের মধ্যেই আশেপাশের সব কিছু ছাই হয়ে বাতাসে উড়ে যাচ্ছে। বাঁচতে চাইলে আপনার হাতে আছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
কিন্তু বিস্ফোরণ হবার পর চোখ ধাধিয়ে দেয়া সেই তীব্র আলো কীভাবে আপনার শরীরের ত্বককে পুড়িয়ে দিতে পারে? কেন কোন অবস্থাতেই আপনার বিস্ফোরণের দিকে সরাসরি তাকানো উচিত নয়? আর কেন আপনার শরীরের সকল কাপড় খুলে ফেলেই বাচাতে পারেন জীবন?
আজকের “আন্তঃবাণীর” এই ভিডিওতে আমরা দেখব কী হবে যদি আপনার কাছাকাছি কোথাও একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়?
বাটন চেপে একবার যদি সেই পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে পালানোর পথ নেই। কিন্তু আপনি কোন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন সেটা জেনে নিন…
মুলত বিস্ফোরনের সাথে সাথে চার ধরনের এনার্জি আপনার দিকে ধেয়ে আসবে:
প্রথমেই, একটি বিস্ফোরণের শক্তিশালী তরঙ্গ আশেপাশের সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে, আপনাকে ছুঁড়ে ফেলবে পুতুলের মতো এবং পথের সকল দালানগুলো ধ্বংস করে দিবে। এরপর আসবে তীব্র চোখ ধাধানো আলো, তারপর শরীরের চামড়া গলিয়ে দেওয়া তাপ এবং প্রাণঘাতী রেডিয়েশন। তারপর গরম গ্যাসের একটি বুদবুদ আগুনের গোলার মতো বিস্তৃত হয়ে বড় হতে থাকবে এবং এর ভেতরের সব কিছু মুহুর্তেই গলিয়ে বাষ্পীভূত করে দেবে। ধ্বংস হওয়া সব ধুলা আর বস্তুকনা বাতাসে উঠে তৈরি করবে সেই আইকনিক মাশরুম ক্লাউড।
এই দুঃস্বপ্ন থেকে যদি আপনি কোনোমতে বেঁচেও যান, আপনি জীবন আর কখনোই স্বাভাবিক হতে পারবেন না।
ইতিহাসে এখন পর্যন্ত শুধু একটি দেশ শত্রুর বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বোমার প্রথমটি "লিটল বয়" ফেলা হয়েছিলা হিরোশিমায়। এতে ছিল ১৫ কিলোটন টিএনটি’র শক্তি, কিন্তু আজকের পৃথিবীতে যে পারমাণবিক বোমাগুলো আছে তার তুলনায় “লিটল বয়” কিছুই না।
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বোমাগুলো হিরোশিমার চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
যদিও এটি মারাত্মক ধ্বংসলীলা চালাবে, তবে পুরো পৃথিবীকে পারমাণবিক ধ্বংসভূমিতে পরিণত করবে না। এতে আপনার নিজেকে এতটা ভাগ্যবান মনে করার কোন কারণ নাই।
যদি আপনি বিস্ফোরণের কাছাকাছি এলাকায় থাকেন, তবে আপনার সময় শেষ। বিস্ফোরণের সেই তীব্র আলো আপনার শরীরের চামড়া মাংস পুড়িয়ে ফেলবে নিমিষেই। জাপানে মারা যাওয়া মানুষের ৫০% এই ফ্ল্যাশ বার্নেই প্রাণ হারিয়েছিল।
আর যদি আপনি সরাসরি ওই আলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার চোখের রেটিনার পিগমেন্ট ধ্বংস হয়ে আপনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। দিনে এই অন্ধত্ব হয়তো দুই মিনিটে সেরে উঠতে পারে, কিন্তু রাতে সেটা হতে পারে চিরস্থায়ী।
আর আপনি যদি নিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন, তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহতা।
মাত্র এক সেকেন্ডের ও কম সময়ের মাঝে পারমাণবিক আগুনের গোলা উঠে যাবে আকাশে। এর তাপে বিস্ফোরণ এর এক শক্তিশালী তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে আপনাকে এবং নিচের মাটিকে ছিঁড়ে ফেলতে চাইবে।
আপনি যদি এর আগে ঘরের ভেতর ঢুকতে না পারেন, তাহলে সেই হাই স্পিড তরঙ্গ আপনার চামড়া ছিঁড়ে ফেলতে পারে মুহুর্তে অথবা এক ধাক্কায় আপনাকে ছুঁড়ে ফেলতে পারে দূরে।
এরপর আসবে ভয়াবহ থার্মাল রেডিয়েশন, যা সরাসরি আপনার দিকেই ধেয়ে আসবে। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এরপর একটি দ্বিতীয় ধাক্কা আসবে, যা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হবে এবং এটি পারমাণবিক বোমার ৯৯% থার্মাল রেডিয়েশন বহন করবে। আপনি বিস্ফোরণস্থল থেকে ৮ কিলোমিটার দূরেও থাকলেও আপনার ত্বকে মুহুর্তেই ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন হয়ে যাবে।
এরপর তৈরি হবে সেই বিখ্যাত মাশরুম ক্লাউড। তখন আপনি কী করবেন?
থার্ড ডিগ্রি বার্নও যদি হয়, সেই ব্যথা সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে শকে ফেলে দিতে পারে। আপনার দরকার হবে হাসপাতালের চিকিতসা। অবশ্য যদি কোনো হাসপাতাল ততক্ষনে অক্ষত থাকে!
হাসপাতাল থাকলেও এত রোগীতে হাসপাতাল গিজ গিজ করবে যে আপনাকে চিকিৎসা পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে।
পারমানবিক বোমা প্রথম মিনিটেই গামা এবং নিউট্রন রেডিয়েশন চারদিকে ছড়ায়। যদি আপনি ভাগ্যগুণে আগুন আর বিস্ফোরণ থেকে বেঁচেও যান, তাহলে এই রেডিয়েশন আপনাকে মেরে ফেলতে পারে।
বিস্ফোরণের ধুলার আস্তর সরে যাওয়ার পর সেই রেডিওঅ্যাকটিভ পার্টিকেল সবকিছুতে ঢুকে পড়বে, বিস্ফোরণস্থল এর নির্দিষ্ট এরিয়াকে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখবে।
রেডিয়েশনে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে খিঁচুনি এবং ক্যান্সার হতে পারে। আপনার রক্তে লিম্ফোসাইট সেলের পরিমাণ কমিয়ে দেবে যার কারনে যেকোন রোগ ব্যাধিতে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়বে।
এই ভয়াবহ ফলআউট থেকে বাঁচতে আপনাকে দৌড়ে আশ্রয় নিতে হবে। রেডিয়েশন আসতে মাত্র ১০ মিনিট সময় পাবেন, এর মধ্যে একটি কংক্রিট বা ইটের বাড়ির ভিতর আশ্রয় নিন এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা সেখানে থাকুন।
আর হ্যাঁ, আপনাকে জামা কাপড় ফেলে দিয়ে উলঙ্গ হতে হবে। যদি আপনি নিজের পোশাক খুলে ফেলেন, তাহলে প্রায় ৯০% রেডিওঅ্যাকটিভ পার্টিকেল শরীর থেকে দূর করা সম্ভব। লজ্জা নয়, আগে জীবনের কথা ভাবতে হবে।
কাপড় খোলার পর শরীর ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন যাতে শরীরে কোন পার্টিকেল লেগে না থাকে।
সম্ভবত বিদ্যুৎ থাকবে না, তবে যদি থাকে, এসি এবং ফ্যান বন্ধ রাখতে হবে, না হলে বাইরে থেকে রেডিয়শনের বিষাক্ত বাতাস ভিতরে ঢুকে পড়বে।
তবে আপনি যতই নিরাপদ থাকুন না কেন, পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ যে আপনার কাছ থেকে খুব একটা দূরে নেই, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া বিশ্বের ৯০% পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক।
যদি আমেরিকা পারমানবিক হামলা চালায়? যদি রাশিয়া পারমাণবিক হামলা চালায়?
আপাতত নিরাপদ আশ্রয় খুঁজুন… কারণ আমেরিকা, রাশিয়া, ইরান অথবা ইসরায়েল পারমানবিক হামলা চালালে কি হবে
সেটি “আন্তঃবাণী”-এর আরেকটি গল্পতে বলা যাবে।