ময়মনসিংহে ৯ দিনে ৭ খুন, তুচ্ছ কারণেই ঝরছে প্রাণ
ঈদের পর মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে ময়মনসিংহ জেলায় ঘটে গেছে অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ড। অধিকাংশ খুনই ঘটেছে ‘তুচ্ছ’ কারণ বা ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে। পুলিশ বলছে, হত্যাগুলোর বেশিরভাগই তাৎক্ষণিক উত্তেজনা ও সহনশীলতার অভাব থেকে ঘটেছে।

আন্তঃবাণী ডেস্কঃ
ঈদের পর মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে ময়মনসিংহ জেলায় ঘটে গেছে অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ড। অধিকাংশ খুনই ঘটেছে ‘তুচ্ছ’ কারণ বা ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে। পুলিশ বলছে, হত্যাগুলোর বেশিরভাগই তাৎক্ষণিক উত্তেজনা ও সহনশীলতার অভাব থেকে ঘটেছে।
সর্বশেষ সোমবার (১৭ জুন) রাতে ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি মোড় এলাকার একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় নবম শ্রেণির ছাত্র আবু রায়হানের (১৬) মরদেহ। সে ১৩ জুন রাত থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের অভিযোগ, প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর মেয়েটির পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে ফুলপুর থানার ওসি আবদুল হাদি।
সেদিনই আরও একটি খুনের ঘটনা ঘটে ত্রিশালের মাগুরজোড়া এলাকায়। হাফিজুর রহমান (২৩) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয় স্থানীয় একটি ইটভাটা থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে হত্যার পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়া গত শুক্রবার গফরগাঁওয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে কুপিয়ে আহত কলেজছাত্র নাঈম মিয়া (২৩) সোমবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পুলিশ জানায়, নাঈমের বিরুদ্ধে চুরি ও হামলার অভিযোগে ছয়টি মামলা রয়েছে। সম্ভবত আগের কোনো ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই তাকে হত্যা করা হয়।
এর আগে ১৬ জুন ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা এলাকা থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয় বৃদ্ধা জোবেদা খাতুনের (৭০)। ঈদের দিন থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এখনো তার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
১৩ জুন গৌরীপুরে চায়ের ১০ টাকা নিয়ে ঝগড়ার জেরে ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন কবীর (২২) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১০ জুন মুক্তাগাছার কুমারগাতা গ্রামে নাতির হাতে লাঠির আঘাতে নিহত হন বৃদ্ধা জমিলা খাতুন। অভিযুক্ত ফেরদৌস মানসিকভাবে অসুস্থ বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে আটক করা হয়েছে।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ৮ জুন ভালুকায়। মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে বিরোধে গার্মেন্টসকর্মী সাবিনা ইয়াসমিনকে কুপিয়ে হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন মিয়া। তিনি ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, “এসব হত্যাকাণ্ড তাৎক্ষণিক রাগ ও সহনশীলতার অভাবে ঘটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।”
নাগরিক সংগঠন ময়মনসিংহ ফোরামের কো-অর্ডিনেটর সাঈদ ইসলাম বলেন, “সমাজে সহনশীলতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, রাজনৈতিক নৈরাজ্য এসব সহিংসতার মূলে রয়েছে। সামাজিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ বাড়ালে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।”
ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। সচেতন মহল বলছে, প্রতিটি হত্যার পেছনে যে মূল্যবোধের অবক্ষয় রয়েছে, তা রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এবি/ এসএফ