মারা গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম, যিনি দা দিয়ে পাঁচ রাজাকারকে করেছিলেন হত্যা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া কিশোরগঞ্জের নারী মুক্তিযোদ্ধা আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

Jun 17, 2025 - 13:27
 0  9
মারা গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম, যিনি দা দিয়ে পাঁচ রাজাকারকে করেছিলেন হত্যা

আন্তঃবাণী প্রতিবেদকঃ 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক সাহসী অধ্যায়ের নাম সখিনা বেগম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া কিশোরগঞ্জের নারী মুক্তিযোদ্ধা আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোররাতে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এই প্রবীণ বীরযোদ্ধা।

সখিনা বেগমের জন্ম কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে। পিতার নাম সোনাফর মিয়া এবং মাতার নাম দুঃখী বিবি। মুক্তিযুদ্ধের আগেই স্বামী কিতাব আলী মারা যান। নিঃসন্তান সখিনার জীবনজুড়ে ছিল এক নিরলস সংগ্রামের কাহিনি।

১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় সময়েও পিছিয়ে থাকেননি তিনি। ভাগ্নে মতিউর রহমান যখন সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হলেন, তখন প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠলেন সখিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ জোগাড়, শত্রুদের গতিবিধি নজরে রাখা ও রান্নার কাজের ফাঁকে খবর সংগ্রহ করে পৌঁছে দেওয়া—এসব করে এক পর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন সরাসরি প্রতিরোধে। ধরা পড়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। কৌশলে পালিয়ে এসে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এক ধারালো দা। সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচ রাজাকারকে একাই কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।

এই দা-খানা আজ ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে—এক ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

স্থানীয়রা জানান, বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি ভাগ্নির বাড়ি বড়মাইপাড়ায় থাকতেন। এলাকার মানুষ তাকে জানতেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি হিসেবে। ছোট-বড় সবাই তার মুখে শুনেছেন যুদ্ধের কথা, শহীদের গল্প, স্বাধীনতার দাম।

আজ মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে নিজ গ্রামে শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

সখিনা বেগমের মৃত্যুতে শুধু একটি গ্রাম নয়, কিশোরগঞ্জ হারাল এক সাহসিনীকে—যিনি স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন একান্তভাবে। তাঁর মতো মানুষরা ইতিহাসের পাতায় নয়, বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।

এবি/সিএস