আজমেরি হক বাঁধন: প্রতিবাদের মুখ, পর্দার নিঃশব্দ বিস্ফোরণ

আজমেরি হক বাঁধন এখন শুধু একজন অভিনেত্রীর নাম নয়, তিনি হয়ে উঠেছেন এই প্রজন্মের এক শক্তিশালী প্রতীক—প্রতিবাদী, সাহসী, ব্যতিক্রমী।

Jun 17, 2025 - 13:03
Jun 17, 2025 - 13:05
 0  11
আজমেরি হক বাঁধন: প্রতিবাদের মুখ, পর্দার নিঃশব্দ বিস্ফোরণ
আজমেরি হক বাঁধন: প্রতিবাদের মুখ, পর্দার নিঃশব্দ বিস্ফোরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক | আন্তঃবাণীঃ

একটি নিঃশব্দ উপস্থিতি, অথচ যত কথা—চোখে, ভঙ্গিমায়, চাহনিতে। আজমেরি হক বাঁধন এখন শুধু একজন অভিনেত্রীর নাম নয়, তিনি হয়ে উঠেছেন এই প্রজন্মের এক শক্তিশালী প্রতীক—প্রতিবাদী, সাহসী, ব্যতিক্রমী।

মুন্সিগঞ্জে জন্ম, বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পড়াশোনা শেষ করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে। কিন্তু চিকিৎসকের পথ ছেড়ে বাঁধন যখন অভিনয়ের অনিশ্চিত পথে পা রাখলেন, তখন হয়তো অনেকেই ভেবেছিল—এ এক খেয়ালি সিদ্ধান্ত। কিন্তু সময় দেখিয়েছে, তিনি স্রোতে গা ভাসাননি, স্রোতের বিপরীতে সাঁতরেই উঠে এসেছেন আলোর কেন্দ্রে।

২০০৬ সালের ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’-এর মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন বাঁধন। এরপর কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও ব্যক্তিগত জীবন ও সংগ্রামের কারণে কিছুটা আড়ালে ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২১ সালে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দিয়ে তিনি শুধু ফিরে আসেননি—তিনিই প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী যিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবের লালগালিচায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে হেঁটেছেন। তার সেই চরিত্র, একজন দৃঢ় শিক্ষক-মা-নারী, বাংলাদেশের নারীচরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে আজও আলোচনায়।

এরপর ভারতীয় সিনেমায় প্রবেশ, বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’–তে অভিনয়। আন্তর্জাতিক সিনেমার সাথে তাল মিলিয়ে বাঁধন এখন এক ‘গ্লোবাল পারফর্মার’। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি শুধু গ্ল্যামারে; সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সরব অবস্থান, একক মাতৃত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য, নারীর অধিকার নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান, সবই তাকে এনে দিয়েছে এক ভিন্ন মর্যাদা।

‘এশা মার্ডার – কর্মফল’: পরিণত বাঁধনের আত্মপ্রকাশ

২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়া সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘এশা মার্ডার – কর্মফল’ সিনেমাটি আজমেরি হক বাঁধনের ক্যারিয়ারে আরেকটি বড় মাইলফলক। একটি খুন এবং তার গভীর তদন্তকে ঘিরে নির্মিত এই স্লো-বার্ন ইনভেস্টিগেটিভ থ্রিলারটি ঢাকাই সিনেমায় নতুন এক ঘরানার সূচনা বলেই ধরা হচ্ছে। থ্রিলারপ্রেমী দর্শকদের কাছে এটি ইতোমধ্যে কাল্ট ফিল্মের মর্যাদা পাচ্ছে।

এখানে বাঁধন এক নারী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়, যিনি কেবল তদন্তকারী নন—তিনি মানসিকভাবে জর্জরিত, দ্বিধান্বিত, এবং জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়ে পরিণত হচ্ছেন। তার অভিনয়ে ছিল চোখে লেখা সংলাপ, চুপ থাকা মুহূর্তের ভার, এবং অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা—সব মিলিয়ে এক পূর্ণাঙ্গ চরিত্রচিত্রণ।

সিনেমার নির্মাণশৈলী, বাস্তব লোকেশনে শ্যুটিং, গ্রিপিং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, দৃশ্যমান বাস্তবতা ও অভিনয়শিল্পীদের পারফরম্যান্স—সব কিছু মিলিয়ে এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। পূজা ক্রুজ, শরীফ সিরাজ, নিবির আদনান, রওনক রিপন, সুষমা সরকারসহ পুরো কাস্ট ছিল ভারসাম্যপূর্ণ। বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সের সাইকো চরিত্রটি এখনো অনেক দর্শকের মনে গাঁথা।

গল্পে “কর্মফল”-এর দর্শন যেভাবে পরিণত হয়েছে, তা বাংলার এক পুরনো প্রবাদকেই ফিরিয়ে আনে—“যেমন কর্ম, তেমন ফল”। এই সিনেমা এক অর্থে শুধু একটি খুনের তদন্ত নয়, বরং মানুষ, সম্পর্ক, এবং পাপ-পুণ্যের জটিল মনস্তত্ত্ব।

আজমেরি হক বাঁধনের ক্যারিয়ার আর কেবল নায়িকা হওয়ার গল্প নয়। এটি এক নারীর নিজের পরিচয় খোঁজার, ভাঙা থেকে গড়ে ওঠার, এবং শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদের ইতিহাস। ‘এশা মার্ডার – কর্মফল’ যেন সেই ইতিহাসের এক গাঢ় ছাপ—যেখানে বাঁধন দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি এককথায় ‘পরিপক্বতা’র নামান্তর।

এবি/সিএস