সারাদেশে এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি, অচল আমদানি-রপ্তানি ও শুল্ক কার্যক্রম
শুধু এনবিআরের প্রধান কার্যালয় নয়, দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম, মোংলা, বেনাপোল, হিলি, আখাউড়া, সোনামসজিদ, রহনপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পণ্য শুল্কায়ন ও লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক জট তৈরি করেছে। কোথাও কোথাও আগেই নিবন্ধিত পণ্য খালাস আংশিক চালু থাকলেও নতুন করে কোনো শুল্কায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না।

আন্তঃবানী নিউজ ডেস্কঃ
রাজস্ব খাতের সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকেই সারাদেশজুড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের প্রধান ফটকসহ তিনটি ফটকে তালা ঝুলছে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী ভবনে প্রবেশ কিংবা বের হতে পারছেন না। ভবনের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও কোস্টগার্ড।
শুধু এনবিআরের প্রধান কার্যালয় নয়, দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম, মোংলা, বেনাপোল, হিলি, আখাউড়া, সোনামসজিদ, রহনপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পণ্য শুল্কায়ন ও লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক জট তৈরি করেছে। কোথাও কোথাও আগেই নিবন্ধিত পণ্য খালাস আংশিক চালু থাকলেও নতুন করে কোনো শুল্কায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বন্দরে দেখা গেছে, শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় জেটিতে ভিড়ে থাকা কনটেইনার বোঝাই জাহাজগুলোর খালাস কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দরের বাইরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও সেগুলো ছাড় হচ্ছে না। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে বন্দর ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে আসবে।
বেনাপোল, আখাউড়া, সোনামসজিদ ও হিলি স্থলবন্দরেও একই চিত্র। অফিসে উপস্থিত থাকলেও কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। ধর্মঘটের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। হিলি বন্দরে ভারত থেকে আসা ৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক খালাস ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে। রহনপুর ও সোনামসজিদ কাস্টমসে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং শাটডাউন কর্মসূচির ব্যানার ঝোলানো হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দেশের ১৩টি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, ব্যক্তিগত অপসারণ দাবি করে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজস্ব খাতকে অচল করে দেওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আজই আলোচনায় বসার জন্য, না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশ থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজধানীতে এসে এনবিআর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান মিথ্যাচার করছেন এবং প্রকৃত সমস্যা আড়াল করছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, সংস্কারের নামে বিশেষ মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
আন্দোলনকারী সংগঠন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বিকেলে জানিয়েছেন, আগামীকাল রোববারও লাগাতার শাটডাউন ও কর্মসূচি চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এই শাটডাউন কর্মসূচি দেশের রাজস্ব আদায় ও বাণিজ্য কার্যক্রমে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অব্যাহত অচলাবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে দ্রুত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
এবি/ এসএফ