যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ, ট্রাম্প বললেন ‘এটাই শান্তির সময়’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণায় জানিয়ে দেন, তার দেশ ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করেছে—ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান। তিনি এ ঘটনাকে ‘ইতিহাসের এক মোড় ঘোরা মুহূর্ত’ আখ্যা দেন।

আন্তঃবাণী প্রতিবেদকঃ
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে যে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, তা শনিবার রাতেই এক নতুন মোড় নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণায় জানিয়ে দেন, তার দেশ ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করেছে—ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান। তিনি এ ঘটনাকে ‘ইতিহাসের এক মোড় ঘোরা মুহূর্ত’ আখ্যা দেন।
এই হামলায় ব্যবহৃত হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান, যা একমাত্র GBU-57 ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর’ বা ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের 'বাংকার বাস্টার' বোমা বহনে সক্ষম। বিশেষ করে ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটি ছিল এই মিশনের মূল লক্ষ্য, যা ভূমির প্রায় ৯০ মিটার নিচে অবস্থিত।
ইরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া
হামলার পরপরই ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা এই আঘাতকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানায়। তারা বলে, জাতির সার্বভৌমত্ব ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি রক্ষায় তারা আইনি লড়াইয়ে যাবে এবং কোনো অবস্থাতেই নিজেদের কর্মসূচি বন্ধ করবে না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ হামলার “চরম মূল্য” দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। রাষ্ট্রপতি মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক উদ্যোগ কখনোই ভয় বা হুমকিতে থেমে যাবে না।”
ইসরায়েলের স্বস্তি ও প্রশংসা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ট্রাম্প আজ প্রমাণ করেছেন, সাহস ও সিদ্ধান্তই ইতিহাসের গতি নির্ধারণ করে।” ইসরায়েল গত ৯ দিন ধরেই ইরানের উপর ধারাবাহিক বিমান হামলা চালিয়ে আসছিল, যার ফলে ফোর্দোসহ বেশ কিছু স্থাপনায় মারাত্মক ক্ষতি হয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাষ্ট্রে মিশ্র প্রতিধ্বনি
মার্কিন রাজনীতিতে এই হামলার পরপরই নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রিপাবলিকান শিবির ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেছে, “এটাই সঠিক পদক্ষেপ।” তবে কিছু রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ যেমন টমাস ম্যাসি এটিকে অসাংবিধানিক বলেই মনে করছেন। এমনকি ট্রাম্পের নিজ দলের কিছু অংশ থেকেও প্রশ্ন উঠেছে: “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির সঙ্গে এই আক্রমণের কী মিল?
আঞ্চলিক অস্থিরতা ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব, মিশরসহ একাধিক দেশ এই হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওআইসি (ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা) ইস্তানবুলে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আবারো আলোচনার পথে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এত বড় বিস্ফোরণে পারমাণবিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষত ফোর্দোর মতো স্থানে। Arms Control Association একে “পরমাণু কূটনীতির বিপর্যয়” হিসেবে অভিহিত করেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই হামলা কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির শেষ অধ্যায়, নাকি একটি বড় যুদ্ধের সূচনা? ট্রাম্প একে ‘শান্তির সময়’ বললেও, তেহরান বলছে, “এখনই শুরু।”
এবি/সিএস