সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য বিভ্রান্তিকর: রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতি নিয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যকে 'বিভ্রান্তিকর' এবং 'অস্পষ্ট' বলে আখ্যায়িত করেছে 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন'।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতি নিয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যকে 'বিভ্রান্তিকর' এবং 'অস্পষ্ট' বলে আখ্যায়িত করেছে 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন'।
সংগঠনটি বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধান উপদেষ্টা একদিকে বলছেন যে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতিতে সংবিধান প্রণয়ন করা হবে, অন্যদিকে তিনি একটি সংবিধান সভা বা গণপরিষদ গঠনের প্রয়োজনীয়তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। এই স্ববিরোধিতা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তারা মনে করে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মূল আপত্তিগুলো হলো:
গণভোটের সীমাবদ্ধতা: সংগঠনটির মতে, একটি নতুন সংবিধানের মতো জটিল ও মৌলিক দলিলের প্রতিটি অনুচ্ছেদ বা পুরো খসড়া নিয়ে গণভোট আয়োজন করা অবাস্তব। গণভোট হতে পারে সংবিধান নতুন করে প্রণয়নের 'নীতিগত ম্যান্ডেট' নেওয়ার জন্য, কিন্তু সংবিধান রচনার কাজটি একটি নির্বাচিত 'সংবিধান সভা' বা 'গণপরিষদ'-এর ওপরই ন্যস্ত করা উচিত।
জনগণের অংশগ্রহণের প্রশ্ন: একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা সংবিধানের খসড়া তৈরি করে শুধুমাত্র 'হ্যাঁ/না' ভোটের জন্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করলে তাতে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় না। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বক্তব্য অনুযায়ী, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই একটি গণপরিষদে বসে আলাপ-আলোচনা, বিতর্ক ও দর-কষাকষির মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান রচনা করবেন। এটাই বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা: সংগঠনটি মনে করিয়ে দেয় যে, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনাই ছিল একটি নতুন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যা জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে হবে। কোনো উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া বা নিয়ন্ত্রিত সংস্কার প্রক্রিয়া সেই আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রস্তাবিত পথ:
সংগঠনটি একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলোর প্রস্তাব করেছে:
প্রথমত, একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার জন্য একটি সংবিধান সভা গঠনের বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে গণভোট আয়োজন করা।
দ্বিতীয়ত, সেই গণভোটের রায়ের ভিত্তিতে একটি সার্বজনীন নির্বাচনের মাধ্যমে 'সংবিধান সভা' গঠন করা।
তৃতীয়ত, নির্বাচিত সংবিধান সভাই নতুন সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করবে এবং তা গ্রহণ করবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম এক বিবৃতিতে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, তিনি গণপরিষদের মতো একটি অপরিহার্য ধাপ এড়িয়ে যেতে চাইছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্নির্মাণ করতে চাই, কোনো সংক্ষিপ্ত বা নিয়ন্ত্রিত পথে নয়।"
এই বিতর্কটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এবি/আরআর