এবার জুতার ডিজাইন চুরি করে ক্ষমা চাইলো এডিডাস
মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী ‘হুয়ারাচেস’ জুতার নকশা নকলের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়েছেন অ্যাডিডাসের সহযোগী ডিজাইনার উইলি শাভারিয়া

আন্তঃবানী ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অঙ্গনে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি হয়ে উঠেছে ডিজাইন নকলের বিতর্ক। এ ঘটনায় সর্বশেষ আলোচনায় আসা নাম অ্যাডিডাসের সহযোগী ডিজাইনার উইলি শাভারিয়া। মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী নকশা হুবহু ব্যবহার করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এই ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার।
ঘটনার শুরু সম্প্রতি যখন শাভারিয়া অ্যাডিডাসের জন্য একটি নতুন জুতার নকশা তৈরি করেন। শুরুর দিকে নকশাটি প্রশংসা কুড়ালেও দ্রুতই বিতর্কের জন্ম দেয়। মেক্সিকোর ওয়াক্সাকান অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায় অভিযোগ তোলে, জুতার ডিজাইনটি আসলে তাদের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ‘হুয়ারাচেস’ জুতার সরাসরি অনুকরণ। ঐতিহ্যবাহী এই চামড়ার জুতার নকশা শুধু একটি ফ্যাশন আইটেম নয় এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
সবচেয়ে সমালোচিত দিক ছিল এই নকশা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো অনুমতি, স্বীকৃতি বা আর্থিক লাভ ভাগাভাগির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অনেকের মতে, এটি ‘কালচারাল অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন’ (সাংস্কৃতিক আত্মসাৎ) - এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ, যা ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান ও বাণিজ্যিক লোভের বহিঃপ্রকাশ।
বিষয়টি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। স্থানীয় ফ্যাশন কর্মী, সাংস্কৃতিক ইতিহাসবিদ ও অধিকারকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেনবাউমও প্রকাশ্যে ব্র্যান্ডটির আচরণকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, “মেক্সিকোর ঐতিহ্য কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পণ্য তৈরির কাঁচামাল নয়; এটি আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়।”
চাপ বাড়ায় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সমালোচনার মুখে শাভারিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল। আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমাদের উচিত ছিল নকশাটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আরও গভীরভাবে গবেষণা করা।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়াতে তিনি ও তাঁর দল নকশা প্রক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক পরামর্শদাতাদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।
এ ঘটনাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে সাংস্কৃতিক সম্পদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, নৈতিক নকশা পদ্ধতি এবং ঐতিহ্যের বাণিজ্যিক ব্যবহার কতটা গ্রহণযোগ্য সেই প্রশ্নে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে স্থানীয় ও আদিবাসী ঐতিহ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা, অনুমতি ও আর্থিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে না হলে এ ধরনের বিতর্ক ভবিষ্যতেও ফ্যাশন দুনিয়াকে নাড়া দিতে থাকবে।
এবি/এএ